featured-image

জল দেখে আতঙ্ক !!

Mediverse Blog

Catagories:

Academic articles,

MEDICINE,

MICROBIOLOGY

জলাতঙ্ক। একে হাইড্রোফোবিয়া কিংবা পাগলা রোগও বলা হয়। আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এই রোগের নাম হয়েছে জলাতঙ্ক। এটি প্রাণিবাহিত Rabies ভাইরাসঘটিত রোগ, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। বাংলাদেশেও বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে থাকে দেশে।

মরণঘাতী জলাতঙ্ক বা Rabies বহু পুরোনো সংক্রামক রোগ। তবে সময়মত সঠিক ব্যবস্থা তথা টিকা গ্রহণ করলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারক, বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর, ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রয়াণ দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৭ সাল থেকে এই দিনটিকে ‘বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।

গতবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিলো ‘All for 1, One health for all’
এবারের প্রতিপাদ্যে-
     ‌‌ 1) জলাতঙ্ক নির্মূলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা,
      2) সমতার গুরুত্ব এবং
      3) সামগ্রিক ব্যবস্থাকে One Health এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

Louis Pasteur

Let’s know something about Rabies.

Rabies বা জলাতঙ্ক কি?


জলাতঙ্ক (Rabies) হল এক ধরনের Viral Zoonotic Disease, (যে রোগ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়)। এটি Hydrophobia নামেও পরিচিত।

জলাতঙ্ক রোগের কারণ:


Rabies নামক এক ধরনের Neurotrophic ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়।
এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে। মানুষ সংক্রমিত প্রাণীর বা এদের লালার সংস্পর্শে আসলে বা এই প্রাণীগুলো যদি মানুষকে কামড় অথবা আঁচড় দেয়,তাহলে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ:

জলাতঙ্কের একটি Incubation Period / সুপ্তকাল থাকে। তবে,প্রাথমিক উপসর্গগুলো হল মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, জ্বর এবং কামড়ের জায়গায় খিঁচুনি।
জলাতঙ্কের উপসর্গ এবং লক্ষণগুলো রোগের শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে Encephalitis সৃষ্টি করে এবং এর পরেই মৃত্যু ঘটে।

অত্যধিক লালা নিঃসরণ, গিলতে অসুবিধা, গিলতে অসুবিধার কারণে পানির ভয় বা Hydrophobia, অনিদ্রা এমনকি আংশিক পক্ষাঘাত এবং কখনও কখনও কোমার মতো লক্ষণগুলো জলাতঙ্কের ইঙ্গিত দেয়।ব্যক্তি শব্দ, আলো এবং এমনকি বাতাসের ঠান্ডা স্রোতে অসহিষ্ণু। বাতাসের ভীতি (Aerophobia) দেখা যায়।

প্যাথোজেনেসিস

Rabies ভাইরাস কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, কামড় এর স্থানেই এরা বংশবৃদ্ধি আরম্ভ করে দেয়। এরা sensory nerves আক্রান্ত করে এবং Axon বেয়ে Central Nervous System এরদিকে এগোতে থাকে। Nerve এর মধ্য দিয়ে পরিবহনের সময় সাধারণত কোনো Immune Reaction হয় না, যদিওবা হয় তাহলে তা খুবই সামান্য। ভাইরাস Central Nervous System এ পৌছানোর পর সেখানে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে এবং পুনরায় Peripheral nervous system বেয়ে salivary glands সহ অন্যান্য অঙ্গে এসে জমা হয়। লালাগ্রন্থি থেকে লালারসে ভাইরাস প্রবেশ করে ফলে জলাতঙ্ক রোগীর কামড়ের মাধ্যমে এটা অন্যের দেহে পরিবাহিত হতে পারে। Nervous System এ এটি নিউরনকে ধ্বংস করে এবং Encephalitis করতে পারে।

জলাতঙ্কের Diagnosis:


ইমিউনোফ্লোরেসেন্স ( Immunofluorescence) নামক একটি পদ্ধতিতে ত্বকের একটি ছোট টিস্যু ব্যবহার করে Rabies Antigen শনাক্ত করা যায়। সংক্রামিত রোগীর লালা থেকে ভাইরাসটি আলাদা করা যেতে পারে। এছাড়াও আমাদের দেশে ELISA , PCR, Animal Observation এই পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করা হয়

জলাতঙ্কের প্রাথমিক চিকিৎসা:


     কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজী ও শিয়ালের কামড় বা আঁচড় দিলে সাথে সাথে ক্ষারযুক্ত সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে।
এরপর যথাসময়ে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

জলাতঙ্ক প্রতিরোধে করণীয়:

এই রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেকরকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো Human Diploid Cell Vaccine (HDCV)। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Purified Chick Embryo Cell Vaccine, Duck Embryo Cell Vaccine, Nerve Tissue Vaccine ইত্যাদি। Duck Embryo Cell Vaccine এর Immunogenicity বা কার্যকারিতা কম এবং Nerve Tissue Vaccine এর allergic encephalitis করতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে টিকা নেওয়া কে প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস ও আক্রান্ত হওয়ার পরে টিকা নেওয়া কে পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস বলে।


জীবাণুর সংস্পর্শ অনুযায়ী ৩ টা ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয় :

ক্যাটাগরি ১: পশু যদি শুধু স্পর্শ করে এবং আঁচড় পড়ে,তবে কোন টিকা নিতে হবে না।
শুধুমাত্র সাবান-পানি দিয়ে ধুতে হবে।

ক্যাটাগরি ২: আঁচড় এবং অল্প রক্তপাত হলে গেলে সাবান-পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং টিকা নিতে হবে।

ক্যাটাগরি ৩: চামড়া ভেদ করা কামড় এবং বেশি রক্তপাতের জন্য অবশ্যই টিকা বা Vaccine ও Immunoglobulin Injection নিতে হবে।

প্রি-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস :
পশুচিকিৎসক, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখাশোনাকারী, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন বা উক্ত এলাকায় ভ্রমণকারী ব্যক্তি ও যারা বাড়িতে কুকর পোষে তাদেরকে প্রতিরোধমূলক টিকা দেওয়া হয়। সাধারণত তিনটি ডোজ ০, ৭ ও ২১ বা ২৮ তম দিনে ও প্রতিবছর বুস্টার ডোজ দেয়া হয়।

পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস

Rabies ভাইরাসের সুপ্তাবস্থা / Incubation period অনেক বেশি হওয়ায় টিকা দেওয়ার পরে প্রতিরোধক ইমিউনিটি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে তাই এই ভ্যাকসিন পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিস হিসেবে নিয়মিত রূটিনমাফিক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার দশ দিনের মধ্যে দিলেও কাজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্ষতস্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধৌত করতে হবে অতঃপর আয়োডিন দ্রবণ দিয়ে পুনরায় পরিষ্কার করতে হবে। টিটেনাস টিকাও দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। পোস্ট-এক্সপোজার প্রোফাইল্যাক্সিসের মধ্যে টিকা ও Human rabies immune globulin (RIG) উভয়ই অন্তর্ভুক্ত, Human Diploid Cell Vaccine এর ডোজ ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ তম দিনে দেওয়া হয়, তবে ৯০তম দিনে আরেকটি বুস্টার ডোজ দেওয়া যেতে পারে, Rabies Immune Globulin (RIG) শুধু একবার প্রথমদিনে দেওয়া হয়, এটি মূলত ক্ষতস্থানে বেশি দিতে হয়, বাকি অংশটুকু মাংসপেশিতে দিতে হয়। টিকার মধ্যে নিষ্ক্রিয় Rabies ভাইরাস থাকে পক্ষান্তরে ইমিউনোগ্লোবিউলিন হলো Antibody তাই এই দুটি ইনজেকশন শরীরের দুটি ভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে দিতে হয় নতুবা RIG মধ্যস্থিত অ্যান্টিবডি ভাইরাসটিকে অকেজো করে দিবে এবং টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। যদি কামড় প্রদানকারী প্রাণীকে ধরে ফেলা যায় তাহলে ১০ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যদি প্রাণীটির মধ্যে Rabies আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে তাকে মেরে ফেলা উচিত।যদি লক্ষণ না পাওয়া যায় তাহলে প্রাণীটি Rabies প্রাণী নয়। সেক্ষেত্রে Rabies ভ্যাকসিন এর প্রয়োজন নেই।

টিকার ধরন এবং ডোজ:

জলাতঙ্কের দুই ধরনের টিকা রয়েছে। একধরনের টিকা মাংসপেশিতে দিতে হয় (Intramuscular) এবং অন্যটি Subcutaneous (চামড়ার নিচে দিতে হয়)।

আগে কিংবা গত পাঁচ বছরে টিকা দেওয়া হয়নি, এমন ব্যক্তি বা শিশুর জন্য ডোজ: ০ (কামড় নয়, টিকা দেওয়ার দিন), ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিন।
পশু আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অন্তত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত।
কোনো কারণে ইমিউনোগ্লোবিন পাওয়া না গেলে (ক্যাটাগরি ৩) দুই বাহুতে ২ টিকা নিতে হবে। ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে নিয়ে ডোজ পূর্ণ করতে হবে।
পাঁচ বছরের মধ্যে টিকা নেওয়া থাকলে ০ ও তৃতীয় দিনে বুস্টার টিকা নিলেই হবে।
Rabies is preventable, but not curable. প্রতিরোধের জন্য কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। Pregnant & Lactating women, New-born Baby, এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিরাও টিকা নিতে পারবেন।

Muhammad Nahid Hassan,

BAMC_19-20

Stay Connected With MediVerse

Share this blog to social media:

Tags:

Suggested post

No post related to the current post. Please click on 'view more' to see more posts

View More
MediVerse Logo